রাজগঞ্জে ঐতিহ্য বাহি হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে

June 16, 2023

রাজগঞ্জে ঐতিহ্য বাহি হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে

মুহাঃ মোশাররফ হোসেনঃ

তেল ছাড়া বাতি জ্বলে আজব এ শহরে, মাটি ফাইটা বৃষ্টির পানি ঝরঝরিয়ে পড়ে’ আশির দশকে চলচিত্রের এ গানটিতে বোঝা যায়, সে সময়ে বেশি ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলো না। সিনেমার কাহিনীতে দেখা যায়, গ্রামের লোক ঢাকা শহরে বেড়াতে এসে বৈদ্যুতিক বাতি ও ফুয়ারার পানি দেখে আশ্চর্য্য হয়ে এ গানটি গায়তো। 

এক সময় বাড়িতে কেরোসিন তেল দিয়ে হারিকেন, কুপি বাতি অর্থাৎ লম্পো জ্বালানো হতো। হ্যাজাক জ্বালিয়ে গ্রামাঞ্চলে বিয়ে-সাদীসহ রাতে নানা ধরনের বড় বড় অনুষ্ঠান করা হতো। সে সময় ডাকপিয়নরা চিঠির বোঝা পিঠে করে হাতে হারিকেন নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুটতেন।

কিন্তু আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও সৌর বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে সেই হারিকেনের ব্যবহার আজ আর দেখা যায় না। বর্তমানে হারিকেন খুঁজে পাওয়া হয়তো দুষ্কর হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ নেই এমন গ্রামও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

তবে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে হারিকেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে সৌর বিদ্যুতের আলো বা চার্জার লাইট। গ্রামাঞ্চলে এখনো হয়তোবা দু’এক বাড়িতে হারিকেন পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু দেখা যাবে সেগুলোতে ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

তবে এই হারিকেন মাঝে মধ্যে দেখা যেতো

মনিরামপুর উপজেলার, রাজগঞ্জ বাজারের বট তলায়, (বর্তমান নাম জয় বাংলা চত্তর). নাম তার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান (সিদ্দিক খুড়া), বয়স তার অনেক আমার মনে হয় আনুমানিক ৬৫ হবে বা তার বেশি, এই বৃদ্ধ লোকটি মাঝে মধ্যে এখানে বসে হারিকেন জ্বালিয়ে বালতী, ছাতা, পুরাতন হাড়ি-কুড়ি ঠিক করতেন,  বর্তমান এই সিদ্দিক খুড়া চাচাটি অভাবের তাড়নায় ইঞ্জিন ভ্যান চালিয়ে জিবীকা নির্বাহ করছে, আমার এই চাচার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

শৈশবের সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মণিরামপুর উপজেলার ৯নং ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের প্রবীণ কবি গুরু সন্তোস কুমার দত্ত জানান, আমরা ছোট বেলায়  হারিকেনের আলোয় লেখাপড়া করতাম । সে সময় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের আলো ছিল না। 

হারিকেনের মৃদু আলোয় লেখাপড়া করতে হয়েছে। আর সেই লেখাপড়ার ভিতর ছিলো আনন্দ এবং প্রতিযোগিতা, বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে সেটাও আর মিলে না। হারিকেনের সাথে ডিজিটাল এসে সেই লেখাপড়াও বিলুপ্তির পথে, ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান ততো একটা ভালো না।

কবি গুরু সন্তোস কুমার দত্ত আরো জানান, হারিকেনের আলো মৃদু হলেও সে সময় শিক্ষার্থী ও বয়োজ্যোষ্ঠদের চোখের তেমন সমস্যা হতো না। কিন্তু বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে শিশু ও প্রবীণদের চোখের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি।

নতুন প্রজন্ম হয়তো হারিকেন সম্পর্কে জানবে না, আর জানতে হলে পড়তে হবে ইতিহাস। হয়তো এক সময় এই হারিকেনের দেখা মিলবে জাদুঘরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *