প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ১১:৪৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২১, ২০২৩, ১২:১৭ পি.এম
ব্যার্থ প্রেমের স্বার্থকতা (গল্প)
ব্যার্থ প্রেমের স্বার্থকতা (গল্প)
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন
রহিম গ্রামের এক সহজ সরল এক সম্ভ্রান্ত গরীব পরিবারের গরীব শিক্ষকের ছেলে। রহিমরা চার ভাই এবং চার বোন, কিন্তু বড় বোন একটা ছেলের জন্ম দেওয়ার দেড় বছর পরে পারিবারিক ঝামেলার জন্য আত্মহত্যা করে, পরবর্তীতে থাকলো চার ভাই আর তিন বোন। রহিম ভাইদের মধ্যে ছোট, বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে ভালোভাবে পড়াশুনাও করার সুযোগ তেমন মেলেনি, তার পরেও রহিম লেখাপড়া করতো প্রথমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং একই সাথে রুববান নামের এক মেয়ে পড়তো, রুববানরা এক ভাই এক বোন। রুববানের বাবা একজন বড়লোক এবং প্রাইমারি শিক্ষক ছিলেন, রুববান ছোট বেলা থেকেই খুবই সাচ্ছন্দে চলাফেরা করতো আর করবেও না কেনো বাবা বড়লোক এবং প্রাইমারি শিক্ষক। তার পরেও সংসারে মাত্র এক ভাই এক বোন, মনেতো একটু হলেও অহংকার থাকে, তার পরেও রুববানের তেমন একটা অহংকার ছিলোনা।
রুববান এবং রহিম একই সাথে লেখাপড়া করতো, কিন্তু রহিম কোনো কারণ বসতঃ প্রাইমারি ত্যাগ করে মাদ্রাসায় ভর্তি হয় এখান থেকে রুববানের সাথে রহিমের যোগাযোগ কমে যায়। রহিম এবং রুববান এভাবে লেখাপড়া করতে থাকে এবং দুইজনই ভালো রেজাল্ট করে তফাৎ শুধু রহিম মাদ্রাসায় আর রুব্বান জেনারেল লাইনে। রুববান এসএসসি এবং রহিম দাখিল পাশ করার পরে আবার দেখা মেলে কলেজে, কিন্তু দূর্ভাগ্য রুববান মহিলা কলেজ আর রহিম সাধারণ কলেজে। এর পরেও রহিম তার বাবার অপছন্দের কারণে আবার মাদ্রাসায় এসে আলিম পরীক্ষা দেয় কি আর করা মাদ্রাসায় ক্লাশ করা নেই তার পরেও পরীক্ষা দিলো কিন্তু রেজাল্ট ভালো হলো না। আর রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণ ছিলো সংসারিক ঝামেলা।
রহিমরা চার ভাই, বড় ভাই সংসার দেখাশুনা করে আর দুইভাই দেশের বাহিরে থাকে কিন্তু সংসারের ভাল চাহিদা মেটাতে পারেনা আর বাবার চাকুরিও শেষ। বাবার চাকুরির সাথে সাথে রহিমের লেখাও শেষ বড় ভাই বাবার ইনকাম না থাকার কারনে আলাদা হয়ে গেলো, রহিমের লেখপড়ার খরচ দিতো রহিমের দুলাভাই, আর রহিমের এই দুলাভাই অন্য দুই ভাইকেও দেশের বাহিরে পাঠায় সংসারের চাহিদা পুরনের জন্য, কিন্তু তারা নিজের মত চলতে থাকে কোনো প্রকার সংসার চালানোর মত অর্থ দেই তার বাহিরে না। রহিমের বড় ভাই আলাদা হওয়ার পরে সংসারের দায়ভার পড়ে রহিমের উপর যার জন্য লেখাপড়া করতে আর পারলো না, অকালে কালে ঝরে গেলো রহিমের লেখাপড়া জীবন। এর মধ্যে বোন একটা বিয়ে দিতে বাকি, কিছুদিন চলার পরে এই বোনের বিয়ে ঠিক হয় এবং বিয়েও হয়ে যায়। এই বোনের বিয়েতে বেশ ঋণ হয় রহিম, এভাবে নুন আনতে পান্থা শুরু হয় রহিমের সংসারে। এভাবে চলতে থাকে রহিমের জীবন সংসার। সংসার দেখাশুনা করতে যেয়ে জীবনের অনেক উজ্জ্বল ভবিষ্যাৎ নষ্ট হয় রহিমের, রহিম মা-বাবা এবং আত্মীয় স্বজন সব কিছুই দেখাশুনা করে। রহিম সরল মনের মানুষ সকলের খদমত এবং
সেবা করতে ভালো বাসে এবং আনন্দও পাই।
রহিম সবাইকে ভালোবেসে নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করে কিন্তু নিজে কিছুই পাইনি পেয়েছে শুধু মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন এবং আল্লাহুর ভালোবাসা ও দোয়া, আর এই দোয়ার বরকতেই রহিম সুখে শান্তিতে থাকে। রহিমের স্কুল জীবনের সেই বান্ধবী রুববান কিন্তু লেখাপড়া করে যাচ্ছে এবং বাড়ির বাহিরে থেকে লেখাপড়া করে, রহিমের সাথে রুববানের বন্ধুত্ব আছে। রহিম সংসারের খরচ চালাতে না পেরে ভাইদের স্মরণাপর্ন হয় এবং একটা ব্যাবসা বেছে নেই। এই ব্যাবসার সমস্ত টাকা পয়সা রহিমের ভাই এবং বোন দেই, কিন্তু দূর্ভাগ্য ব্যাবসা ভাল একটা হলোনা কারন যে পুজি বিনিয়োগ করার দরকার ছিল সে পুজি আর দিলোনা তারা, পরবর্তীতে অর্থের জন্য ব্যাবসা আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ রহিমের বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়লো, রহিম ও তার বোন বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো, এবং অনেক টাকাও খরচ করলো কিন্তু বাবাকে আর বাঁচাতে পারলোনা, নেমে আসলো রহিমের বাড়িতে চরম শোকের ছায়া, এভাবে বহুদিন শোকের ভিতর রহিমের পরিবার নিয়ে চলতে থাকে। রুববান ও রহিমের বন্ধুত্ব চলেই আসছে, রুববান রহিমের বাড়িতে এসে রহিমের পরিবারকে শান্তনা দিতে থাকে। রহিম এবং রুববান একে অপরকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারেনা।
রহিমের বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের সব দায়িত্ব নিয়েই চলতে থাকে রহিম। রহিমের ব্যাবসা বেশি ভালো না হলেও মোটামুটি চলতে থাকে, রহিম এবং রুব্বান প্রায় সময় দেখা সাক্ষাৎ করতো এভাবে এদের কথাবার্তা চলতে থাকে কেউ তাদের পৃথক করতে পারেনা। এবার শুরু হয় রহিমের বিয়ের কথা, এবং মেয়ে দেখাশুনাও করতে থাকে রহিমের পরিবার থেকে। রুববানের লেখাপড়া শেষ হয় নাই, রুববান লেখাপড়া করতে থাকে এর মধ্যে রহিমের পরিবার রুববান এবং রহিমের যোগাযোগের কথা কিছুটা অনুমান করে রহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে রুববানের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় কিন্তু দূর্ভাগ্য রুববানের বাড়ি থেকে মেনে নেই না কারন রুব্বানের বাবা বড় লোক এবং প্রাইমারি শিক্ষক আর রহিম সামান্য একটা ব্যাবসা করে তার পরেও লেখাপড়া বেশি করেনি তার জন্য রুববানের পরিবার থেকে মেনে নিতে পারেনি। এই কথা শুনেই রুববানের বিয়ের কথার আলোচনা শুরু হয় এবং রুববানের পরিবার রুববানের বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুনা করতে থাকে। রহিমের বিয়ের জন্য রহিমে পরিবার মেয়ে দেখাশুনা করতে থাকে এবং মেয়ে দেখে পছন্দও হয়ে যায় এবং এক পর্যায় রহিমের বিয়ের দিন/তারিখও ঠিক হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার রুববানের পরিবার রুববানের জন্য ছেলে দেখে রহিমের আগেই রুববানের বিয়ে দিয়ে দেই। রুববানের বিয়ের পরেই রহিমের বিয়ে হয়। এভাবেই রহিম এবং রুববানের শুরু হয় এবার সংসার জীবন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস রহিম এবং রুববানের দুই জনের এখনো ভালোবাসা কিছুটা হলেও এখনো রয়ে যায়, মাঝে মাঝে উভয়ের দেখা হয় কিন্তু বলার কিছুই নাই শুধুই চাপা আফসোস দুইজনের ভিতর কাজ করে কেউ কিছুই বলতে পারে না। এভাবেই দুইজনের ব্যার্থ ভালোবাসা নিয়েই একে অপরে নিজ নিজ সংসার করতে থাকে ফুটিয়ে কেউ কাউরে কিছু বলতে পারেনা আছে শুধুই আফসোস আর আফসোস (কষ্ট)।।
@কপিরাইট//priyojhanpa.net. 2024. লেখক মুহা: মোশাররফ হোসেন।