সাদা মনের মানুষ
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন
শরিফ খুব সহজ সরল সাদামাটা একটা মানুষ। শরিফের বাবাও সহজ সরল সাদামাটা একজন মানুষ এবং ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন। শরিফের বাবা গ্রামের এক মাদ্রাসায় চাকুরি করতেন। শরিফ সংসার জীবন থেকে গাছ লাগাতে ভাল বাসতো। শরিফের বড় ভাই নার্সারির চাষ করতো এবং বড় গাছও লাগাতো। শরিফ এবং বড় ভাই মিলে একসাথে থাকতো। শরিফরা ৪ভাই আর ৩বোন, শরিফ বাড়ির বাহিরে থেকে লেখাপড়া করে আর ২ ভাই দেশের বাহিরে থাকে। বাড়িতে থাকে ছোট বোন, মা, বাবা, আর বড় ভাই/ভাবি এই নিয়ে সংসার। বড় ভাই সংসারের দায় দায়িত্ব নিয়ে সংসার চালাই। শরিফের বাবা চাকুরি শেষে বাড়িতে থাকে, অবসারে বই লিখে, কিন্তু দুর্ভাগ্য বাবার রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়, সারাজীবন চাকুরি করে নিজে হাতে খরচ করেছে আর সংসার চালিয়েছে কারোর করুনার পাত্র হয়নি এখন কি করবে? শুরু হয়ে যায় চিন্তা ও অর্থনৈতিক সংকট। হাত খরেচের টাকা লাগলে ও ছেলেদের কাছে হাত পাততে হয় এইটা ছিলো বাবার মনের ভিতর চাপা কষ্ট, শরিফের বাবার মনের কষ্ট আর অর্থনৈতিক সমাস্যার কারনে সামনের দিকে এগুতে পারে না, এবং সেখানেই শরিফের বাবার বই লেখা লেখির কাজের সমাপ্ত ঘটে। বড় ভাই নার্সারি গাছ লাগিয়ে এবং মাঠে কিছু চাষি জমি আছে, সেই জমিতে চাষ করে সংসার চালাতো। কিন্তু খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত হতো, প্রায় সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। এদের ছোট বোনটা এবং শরিফ খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতো। শরিফ অবশেষে তার বোনের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করতো, অর্থাৎ ছোট বোন এবং শরিফের লেখাপড়ার খরচ যোগাতো তাদের এই বোন। এই বোন ছিলো তাদের বোনদের মধ্যে মেঝো এবং একটু ধণী, বোনাইটাও খুব ভাল ছিলো, তাদের সংসারের প্রায় সব কিছুই দেখা শুনা করতো। শরিফদের সংসারের অর্থনৈতিক সংকট নিরাশনের জন্য শরিফের মেঝো ভাইকে শরিফের বোনাই নিজ খরচে বিদেশে নিয়ে যায়, কিন্তু সেই মেঝো ভাই ভালমত কাজ কর্ম করে না এবং বাড়িতে টাকা পয়সাও তেমন দেয়না, যার কারনে সংসারের সেই একই অবস্থা রয়েই যায়। এর ভিতর শরিফের বোনাই হঠাৎ ব্যাবসায়িক ভাবে ধরা খেয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে গেলে দেশের বাহিরে পাড়ি দেই। সেখান থেকেও সে শরিফদের সহযোগিতা করতো। মেঝো ভাই বিদেশে কাজ-কর্ম তেমন করে না, যার কারনে সেজো জন লেখাপড়া বাদ দিয়ে মনের কষ্ট নিয়ে সেই বোনায়ের আবার সহযোগিতা নিয়ে বিদেশ চলে যায়। শরিফ লেখাপড়া করে বোনের বাড়ি থেকে আর ছোট বোনটা বাড়িতে থাকে কিন্তু খুব কষ্ট করে ছোট বোনটা বাড়িতে লেখাপড়া করে, সংসারে বোন থাকাটা ভাই ভাবির কাছে বোঝা লাগে সেই কবলে পড়ে যায় শরিফের ছোট বোনটা, তার ভিতরে মা বাবা ও আছে। এই ভাবে চলতে থাকে শরিফদের সংসার, কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পরে সংবাদ আসে মেঝো ভাই বিদেশ থেকে পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে খালি হাতে বাড়ি আসছে, আর এই বাড়ি আসার কথা শুনেই বড় ভাই কোন এক কাল বৈশাখি ঝড়ের মত আঘাত করে নার্সারি বাগান এর বড় একটা অংশ নিয়ে পৃথক হয়ে যায়। শরিফের কাঁধে পড়ে যায় সংসারের চাপ এবং ঘটে লেখাপড়ার বিঘ্ন। এর পরে শরিফ বাবা মা, ভাই বোন নিয়ে সংসার চালিয়ে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। কিন্তু গাছ লাগানো তার বড় ভায়ের কাছ থেকে শিক্ষা, সেই থেকে শরিফ গাছ লাগায় আর সংসার চালায়। এর পরে মেঝো ভাইকে বিয়ে দেয় শরিফ এবং মেঝো বোন মিলে, এবার আরো বেড়ে যায় সংসারের খরচ, কিছুদিন যেতে না যেতেই ছোট বোনের বিয়ের কথা আসে এবং বিয়েও হয়ে যায়, সেখানেও অনেক খরচ হয় এইভাবে চলতে থাকে শরিফের সংসার জীবন। এর পরে বাবাও অনেকটা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তার পিছনেও অনেক টাকা খরচ হয়, সেজো ভাই এবং মেঝো বোনটা সহযোগিতা করে, কিন্তু তাতে শরিফের হাত-পা বাধা, নিজ ইচ্ছায় কিছু করতে পারে না, তাই সিদ্ধান্ত নেই স্বাধীন ভাবে স্বাধীন জীবনে ফিরে যেতে, স্বাধীন ভাবে কিছু করতে। তাই শরিফ সিদ্ধান্ত নেই ব্যাবসা করবে এবং ব্যাবসা করতে মেঝো বোন ও সেজো ভাই এর সহযোগিতা নিয়ে একটা ব্যাবসা শুরু করে, শরিফ ব্যাবসা করতে থাকে, প্রথম প্রথম ব্যাবসা ভাল না হলেও পরবর্তীতে ব্যাবসা একটু ভালোর দিকে যায়। শরিফ ব্যাবসার পাশাপাশি গাছ ও লাগায়, গাছ লাগানোটা শরিফের নেশা। এর পরে শরিফের বাবা হঠাৎ করে অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং শরিফ ও শরিফের মেঝো বোন মিলে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে, অনেক চিকিৎসা এবং চেষ্টা করার পরেও বাবাকে আর বাঁচাতে পারেনাই, শরিফের বাবা মৃত্যু বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রজিউন)। এর পরে বাবার মৃত্যুর শোকে শরিফ কাতর, তার ভিতর দিয়ে আবার মনকে শান্তনা দিয়ে শরিফ ব্যাবসা করতে থাকে, কিন্তু ব্যাবসা আবার তখন ভাল হচ্ছিল না কারন শরিফ ব্যাবসা করতো পাইকারী, আর পাইকারী ব্যাবসা" দোকানে মাল ভাল না থাকলে কাস্টমার থাকে না ফলে ব্যাবসায় ব্যাপকভাবে ধরা খেতে হয়, সেটাই হয়েছিল শরিফের, পুজি সংকটের কারনে ব্যাবসায় আস্তে আস্তে ধরা খেতে শুরু করেছিল। এর পরে আবার কিছুদিন যাওয়ার পরে হঠাৎ শরিফের বিয়ের কথা শুরু হয় এবং কয়েকটা মেয়েও দেখা শুনা করা হয় এক পর্যায়ে শরিফের বিয়েও হয় শরিফের স্ত্রীর নাম রোজিনা। এবার শরিফের সংসার জীবন শুরু হয়, শরিফের সংসারে আরেক ধাপ খরচ বেড়েও যায়। শরিফের মাথার উপর চাপ, কি আর করা, রাখে আল্লাহ মারে কে? সবই তার খেলা এখন শরিফের আছে সম্বল ঐ ব্যাবসা আর মাঠে কিছু চাষি জমি। জমি চাষ করে এবং গাছ লাগায়, গাছ বাঁচুক আর না বাঁচুক গাছ লাগাতে শরিফ পছন্দ করে তাই লাগায়। সংসারে খরচ দিন দিন বাড়তে থাকে, খরচ অনুযায়ী শরিফের ইনকাম হয় না, কি করবে শরিফ ভেবে পায় না কুল, কিন্তু শরিফ বিয়ে করে এক সম্ভ্রান্ত ধণী পরিবারের মেয়ে, শরিফ শশুর বাড়ি থেক অনেক ছাপোট পেতে থাকে এবং শরিফের স্ত্রী (রোজিনা) ও অনেকটা সংসারি ও ধার্মিক, শরিফের স্ত্রী (রোজিনা) শরিফের পাশাপাশি বাড়িতে গরু ছাগল, হাস, মুরগী, ইত্যাদি পোষে এবং তার থেকে একটা অংশ দিয়ে শরিফের সহযোগিতাও করে। এভাবে চলতে থাকে শরিফের স্বামী/স্ত্রী মিলে সংসার। কিন্তু সংসার ভাল একটা চলে না, সংসারে নূন আনতে পান্থা শুরু হয়ে যায়। আবার অনেকদিন ব্যাবসা করার পরেও শরিফের ব্যাবসা ভাল হয়না, আর ব্যাবসা ভাল না হওয়ার কারনে দৈনন্দিন খরচ যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে শরিফ ব্যাবসা করতে যেয়ে মহাজনের কাছে অনেক টাকা ঋন হয়ে যায় এবং মার্কেটে অনেক টাকা পড়ে ও থাকে অনাদায় হিসেবে। শরিফ ব্যাবসা শেষ পর্যন্ত আর ধরে রাখতে না পেরে শরিফের স্ত্রী (রোজিনা) এর সাথে পরামর্শ করে ব্যাবসা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং এক পর্যায় সিজেন শেষে হাল খাতা দিয়ে কালেকশন ভাল না হওয়াই ব্যাবসা বন্ধ করে দেয়। এবং হয়ে যায় বেকারত্ব জীবন, আর এই ব্যাকারত্ব জীবন যে কতো কঠিন সেটা ব্যাবসা বন্ধ হওয়ার পরে শরিফ হাড়ে-হাড়ে টের পেতে থাকে। শরিফ কি করবে এবার আবারো চিন্তায় পড়ে গেলো কিভাবে সংসার চালাবে? পরবর্তীতে শরিফ আবারো তার বড় ভায়ের স্মরণাপর্ণ হয় এবং শরিফ তার বড় ভায়ের সাথে পরামর্শ করে শরিফের বড় ভায়ের শিক্ষানুযায়ী কিছু গাছ লাগানো ছিলো, সেই গাছ থেকে কিছু গাছ বিক্রয় করে বাড়ির পাশে একটা মুদির দোকান দেয়, শরিফ মুদি ব্যাবসার সাথে অনেক ব্যাবসা করতো, শরিফের স্ত্রীও সেই ব্যাবসার সহযোগিতা করতো অনেক সময় শরিফের স্ত্রী রাতে দোকানের জন্য ব্যাবসায়িক সহযোগিতা করতো। এইভাবে দুইজন (স্বামী/ স্ত্রী) মিলে মিশে সংসারের জন্য পরিশ্রম করে যেতো, সেখানে শরিফের ব্যাবসা খুব ভাল না হলেও মোটামুটি চলতো কারোর কাছে হাত পাততে হতো না। কিছুদিন ব্যাবসা চালানোর পাশা পাশি আবার গাছ ও লাগাতো। কিন্তু কিছু দিন ব্যাবসা করার পরে শরিফ তার সেজো ভায়ের কথামত মুদি ব্যাবসা বাদ দিয়ে চলে যায় শরিফের বোনায়ের এক ব্যাবসায়, সেই ব্যাবসার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে, সাথে গরু চাষ এবং গাছ লাগানো নেশাটা শরিফের থেকে যায়। শরিফের বোনাই দেশে থাকে এবং দেশে থেকে শরিফ ও শরিফের বোনাই মিলে একসাথে ব্যসবসা করতে থাকে কিন্তু সেই ব্যাবসায় শেষ পর্যন্ত ভাল না হওয়ার কারনে শরিফের বোনাই শরিফের কাছে দায়িত্ব দিয়ে দেশের বাহিরে চলে যায়। শরিফ পড়ে বিপাকে কি করে এত বড় ব্যাবসার দায়িত্ব নিয়ে শরিফ চালাবে। এর ভিতরে শুরু হলো সেই বছরই আল্লাহর দুর্ভিক্ষ, সেই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে ব্যাবসা আবারো নিস্তেজ হয়ে যায়, কোন রকম ব্রেন খাটিয়ে শরিফ বোনায়ের পরামর্শে ব্যাবসা ধরে রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু মনোবলতো থাকা লাগে! সেই মনোবল য্যোগায় শরিফের বোনাই, যার মনোবলে শরিফ ব্যাবসার হাল ধক্ত করে ধরে। কিন্তু ব্যাবসায় একবার বে-লাইন হলে আর ঠেলে ওঠা কঠিন হয়ে যায়, শরিফ শেষ পর্যন্ত ব্যাবসা ভাল ভাবে করতে পারে না। এর মধ্যে শরিফের সেজো ভাই আবার বিদেশ থেকে বাড়ি আসে এবং সেও বিয়ে করে, এবং সে সংসার থেকে আলাদা হয়ে দূরে থাকে, কিন্তু তার ইনকামের টাকার ভাগ শরিফের দেই নাই, কারন সেই যখন বিদেশ যায় সংসার থেকে কোন সহযোগিতা দিতে পারে নাই সেও বোনায়ের সহযোগিতা নিয়ে বেদেশ গিয়েছিলো, এটাই ছিলো আসল কারন। কি আর করবে শরিফ, শরিফ সাদা মনের মানুষ, কোন কষ্ট না নিয়ে মনের কষ্ট মনে রেখে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। শরিফ বোনায়ের ব্যাবসায় এসেছিল সেজো ভায়ের মাধ্যমে, এবার শরিফ সেজো ভাইকে বললো তোর জন্য আমি এখানে ফেসে আছি আমার এখন তুই বাঁচা? শরিফের ভাই ও এবার শরিফের সাথে বোনায়ের ব্যাবসার হাল ধরে, কিন্তু সেও ব্যাবসা ভাল করতে পারলো না, শরিফ এবং শরিফের সেজো ভাই মিলে এখনো বোনায়ের ব্যাবসার দায়িত্বে আছে, এবং ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে,পাশা পাশি শরিফ গরু চাষ, ও মাঠে কিছু জমি আছে সেটা চাষ করে এবং প্রতি বছরে একটা হলেও গাছ লাগায়। শরিফের সংসারে আবার এসে যায় নতুন অতিথি, শরিফের ১ম পুত্র সন্তান, সংসারে দিন যতো যায় খরচ বাড়তে থাকে, কিন্তু শরিফ ও তার স্ত্রীর আছে মনোবল আর আল্লাহর প্রতি ভরসা ও শরিফের মা বাবার দোয়া, আর সেই মনোবল ও মা বাবার দোয়া নিয়েই সংসার চালাতে থাকে। এ ভাবে শরিফ সংসার চালিয়ে যেতে থাকে, কিছুদিন যাওয়ার পরে আবারো শরিফের ঘরে আসে ১ কন্যা, আর কন্যা সন্তান হলো সংসারের আরেকটা আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত, শরিফের যেবার কন্যা সন্তান হলো সেইবার শরিফের ঘরে ভরে গিয়েছিল আনন্দের এক ছোয়া, মাঠে ফসল এবং সবকিছুতেই শরিফের বরকত বেড়ে যায় আল্লাহর রহমতে। শরিফ এর সংসার আল্লাহর রহমতে এবার ভাল একটা পজিশনে যাওয়া শুরু হলো। শরিফের সংসার এবার বেড়ে গেলো, শরিফের সংসারে পুত্র, কন্যা, সাথে আছে মা, সংসার খরচ দিন-দিন বাড়া ছাড়া কমছে না। সবই ফয়সালা আল্লাহই করে, শরিফ এবং শরিফের স্ত্রী মিলে এভাবে শক্ত ভাবে সংসার চালাতে থাকে, কিন্তু ভাল খাওয়া, ভাল চলা, মানুষের চোখে পড়ে যায় শত্রুতার রেশ! সমাজের কিছু লোক শত্রুতা শুরু করে, এমনকি শরিফের আপন জনেরাও, তার পরেও সব বাধা উপেক্ষা করে আল্লাহর রহমতে শরিফ এবং শরিফের স্ত্রীর প্রচেষ্টায় শরিফ আজ প্রায় নিজের পায়ে দাড়াতে শুরু করেছে। সবই হলো আল্লাহর ইচ্ছা এবং নিজেদের চেষ্টা, মা বাবার দোয়া আর আত্বীয় স্বজন, ও মানুষের ভালবাসা।
এবার আবার শরিফের বোনাই দেশে চলে আসে, কিন্তু ব্যাবসার অবস্থান ভাল না থাকায় শরিফের বোনাই অন্য ব্যাবসা শুরু করে। শরিফের বোনাই অন্য ব্যাবসা করে যাচ্ছে কিন্তু কি আর করা' আমার পাশাপাশি এবার সেজো ভাইও তো ফেসে গেলো ব্যাবসার ভাল অবস্থা না হওয়াই শরিফের বোনাই দায়িত্ব নিতে চায়না, যাই হোক অনেক বুঝানোর পরে শরিফের বোনাই আবার ব্যাবসার দায়িত্ব নিল। এবং শরিফের বোনায়ের পরিচালনায় শরিফ এবং শরিফের সেজো ভাই একসাথে বোনায়ের ব্যবসা দেখাশুনা করে যাচ্ছে। শরিফের বোনাই নিঃস্বন্দেহে একটা ভাল মানুষ, বাবা মায়ের পরে কারো কথা ভাবতে গেলে শরিফ তার বোন এবং বোনায়ের কথা আগে ভাবে।
এরই মধ্যে শরিফের মা আবার খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, মায়ের পিছনে অনেক টাকা খরচ হয়, তবে এর কিছু অংশ খরচ শরিফের সেজো ভাই দেই, তার জন্য শরিফ পেরে ওঠে, নইলে শরিফের ইনকাম অনুযায়ী এতো খরচ যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে যেতো, এবং সংসারের চলমান ব্যাহত হত। তবে খরচ দিলেতো আর দায়িত্ব পালন করা যায় না, ধৈর্য ধরা, সহ্য করা এর জন্য লাগে আলাদা মানুষিকতা, সবাই এটা পারেনা। শরিফ ভাইদের ভিতর ছোট হওয়ার পরেও সংসারে শরিফ বড় ভায়ের মত এখনও দায়িত্ব পালন করে আসছে, আর এই সংসারের জন্য শরিফ কোন সময় স্বাধীণভাবে চলতে পারে না। সবাই আনন্দ ফুর্তির ভিতর দিন কাটালেও শরিফ সেটা পারে না। শরিফের সংসারে থাকে অসুস্থ্য মা, মাকে বাড়ি রেখে যেতে গেলেও কারো না কারো দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়, অনেক সময় মাকে সাথে নিয়েও শরিফ এবং শরিফের স্ত্রী যায়। এরই নাম দায়িত্ব ও ধৈর্য্য, যেটা আর কেও করে না, যেটা শরিফ এবং শরিফের স্ত্রী করে। অনেক সময় শরিফের স্ত্রীর সাথেও শরিফের মনদ্বন্দ হয়, হবেও না কেন? বিয়ের পর থেকে শরিফের স্ত্রী কোনোদিন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারিনি, প্রত্যেকটা মেয়ের সাধ আল্লাদ থাকে শরিফের স্ত্রী সেটা পাইনি, সেই চাপা ক্ষোব শরিফের স্ত্রী রোজিনার মনের ভিতর সব সময় থাকে, এর মধ্যে দিয়ে মিলে মিশে সংসার জীবন কাটিয়ে দেই, কাওকে বুঝতে দেয় না, মনের কষ্ট মনেই রাখে, আল্লাহ পবিত্র কুর আনে বলেছেন যে আল্লাহ ধৈর্য্যশীলকে পছন্দ করেন এই প্রত্যাশায় শরিফের স্ত্রী রোজিনা শান্তনা নিয়েই থাকে। শরিফ বোনায়ের ব্যাবসার দায়িত্ব থাকার পরেও বোনায়ের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি এসে সংসারে খুটি-নাটি অনেক কাজ করে শরিফের স্ত্রীর সহযোগিতাও করে, আর এইটা অনেকে সহ্যও করতে পারে না, তার জন্য অনেকে মনে মনে হিংসা করতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ যাকে চাই তাকে অর্থ ও সম্মান দেন, আর চান না, তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন, সবই তার খেলা। শরিফ এবং শরিফের স্ত্রী সংসারের পাশা পাশি ভাই, বোন, আত্বীয় স্বজন, এদের সকলের দেখাশুনা এবং অসুস্থ্য মায়ের সেবা করে যাচ্ছে। টাকা থাকলেও সবার ভাগ্যে সব কিছু জোটেনা, যেটা শরিফের ভাগ্যে যোটছে, সেটা হলো আত্বীয়-স্বজন এবং মায়ের সেবা করা, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত, সেটা অর্জন করেছে শরিফ। এভাবে শরিফ তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্বীয়-স্বজন আর অসুস্থ্য মাকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে থাকে, এর পাশা-পাশি সমাজিক ও গনমাধ্যম কর্মী হিসাবে কাজ করে যায়। শরিফ এখনও বিশ্বাস্থতার সহিত তার বোনায়ের ব্যাবসার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। শরিফ সামাজিক কাজ কর্ম করতে অনেকটা ভাল বাসে, আর সমাজের মানুষও অনেকটা শরিফকে ভাল বাসে, মানুষ যাকে ভাল বাসে আসমানের ফেরেস্তারাও তাকে ভালবাসে পাশা-পাশি আল্লহও সেই মানুষকে ভাল বাসতে থাকে, এরই মাঝে শরিফ এবং শরিফের স্ত্রী ভাল ভাবে দিন অতিবাহিত করে। শরিফ কিন্তু আত্বীয়-স্বজন এবং মানুষের খেদমত করতে অনেকটা ভাল বাসে, এভাবে চলতে থাকে শরিফের জীবন সংসার, আর শরিফ সংসার এর পাশা-পাশি গাছ লাগানো এখনও অব্যাহত রেখেছে। আজও প্রতি বছর কিছু না কিছু গাছ লাগায়, আসলে এটা শরিফের নেশায় পরিনত হয়ে গেছে। এখনও অবদি জায়গা কম থাকলে ও যেখানে জায়গা থাকে সেখানে শরিফ গাছ লাগিয়ে আসছে। শরিফ সহজ সরল ও সাদা মনের মানুষ, কোন কিছু না ভাবেই সংসারে এই সব করে ও গাছ লাগায় একবারো ভাবে না সংসার তার একা না, সংসারে যে টুকু জমি জায়গা আছে তাহা সবার, একদিন হলেও সব কিছু ভাগ হয়ে যাবে, এবং সকল গাছ ও তো একদিন ভাগ হবে, এই সব না ভেবেই সব কিছু ত্যাগ করে শরিফ করতে থাকে আসলে মুল কথা হলো গাছ সকল প্রানীর অক্সিজেন এবং কার্বনডাই অক্সাইড যোগায় এবং এই গাছে যে ফল এবং ফুল হয়, আর মানুষ কিংবা পশু পাখি তাহা আহার করে এইটাই হলো সদকায়ে জারিয়া। গাছ সকল প্রানীর অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড যোগায়। আমাদের দেশে যদি এতো গাছ না থাকতো তাহলে সৌদি আরবের মত মরুভূমি হয়ে যেতো, বর্তমানে আমাদের দেশে যে তাপদাহো, এই তাপদাহো থেকে বেঁচে থাকা সকল প্রানীর খুবই কঠিন হয়ে পড়তো। আমরা এখান থেকে শিক্ষা নিই, যে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্বীয়- স্বজন, এবং সমাজের অবহেলিত মানুষের সাথে ভাল ব্যাবহার করা ও এদের পাশে থাকা এবং প্রত্যেকে বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে সকল প্রানীর অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড যোগান দিতে সহযোগিতা করা। আত্বীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ঠকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। আর গাছ প্রত্যেকটা প্রানীর অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড যোগানোর সহযোগিতা করে। গাছ হলো আল্লাহর এক প্রদত্ত নেয়ামত এবং সংসারে আত্বীয় স্বজন আসলে তাদের খেদমত করলে সংসার আল্লাহর নিয়ামত অবধারিত। হে আল্লাহ আপনি আমাদের সকলকে বুঝার তৌফিক দিন। (আমিন)