মুহাঃ মোশাররফ হোসেনঃ
আজ ৬ ডিসেম্বর, যশোর মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে যশোর পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। এদিন বিকেলে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। আর দেশের মধ্যে প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা।
একাত্তরের ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। ওই সময় পাক বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী। এরপর ২২ নভেম্বর রাতে চৌগাছায় পাক বাহিনীর পতন হয়। আর ৬ ডিসেম্বর দুপুরে যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্য্য খচিত গাড় সবুজ পতাকা 🇧🇩।
অন্যদিকে মুক্তির আনন্দ-উজ্জল উচ্ছাস। নবজন্মের সেই মুহূর্তকে তারা বরণ করে নিয়েছিলেন হৃদয়ের সমস্ত অর্ঘ্য দিয়ে। আর এ বিজয় ছিল জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ফল।
জীবন বাজি রেখে যুদ্ধের পর নিজ জেলা শত্রুমুক্ত হওয়ার সেই দিনের সেই বিজয় উল্লাসের কথা স্মরণ করে আবেগ আপ্লুত বীর সেনারা।
যশোরের চৌগাছা উপজেলার সালুয়া বাজারে হানাদার বাহিনী তৈরি করে অগ্রবর্তী ঘাঁটি। এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৩,৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এ তিন দিন যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গুলি নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালাতে শুরু করে। এদিন সকাল ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচণ্ড লড়াই হয়। বিকেলেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝতে পারে, যশোর দূর্গ আর কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়।
বেনাপোল অঞ্চলে দায়িত্বরত লে. কর্নেল শামসকে নওয়াপাড়ার দিকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন ব্রিগেডিয়ার হায়াত। আর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনি পালিয়ে যান খুলনার দিকে। পালানোর সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্ব মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাস দখল করে।
যশোর সেনানিবাস এলাকায় হানাদারদের হাতে নিহত শহীদদের কঙ্কাল দাফনের প্রস্তুতি সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত 'যশোর গেজেটিয়ার'-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ তারিখ সন্ধ্যা হতে না হতেই পাকবাহিনীর সবাই যশোর ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর ও মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন। তখন তারাও জানতেন না যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট শূন্য। তারা বিস্মিত হন কোনও প্রতিরোধ না দেখে।
স্বাধীনতার পর থেকে ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হতো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদদের দেয়া তথ্য মতে, ২০১০ সাল থেকে ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর যশোর শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় মুক্তিবাহিনী। ১০ ডিসেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওয়ালিউল ইসলাম। ১১ ডিসেম্বর টাউন হল মাঠে জনসভা হয়। সেখানে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অফিস-আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় ১২ ডিসেম্বর।
মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা..................